হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় শীতের শুরু থেকেই বিভিন্ন হাওরে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি, পুকুর খনন ও বসতবাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব জমি থেকে এক্সকাভেটর (ভেকু) ব্যবহার করে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে, যা কৃষির জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
গত তিন মাস ধরে এই অনিয়ন্ত্রিত মাটি কাটার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করলেও সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষ করে উপজেলার শিবপাশা, বদলপুর ও কাকাইলছেও ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওড় ও গ্রামের পাশে প্রতিদিনই ভেকু দিয়ে কৃষিজমির মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমিকে পুকুর বা বসতভিটায় রূপান্তর করতে হলে অনুমতি নিতে হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে নামমাত্র জরিমানা করা হলেও মূল অপরাধীরা রয়েই যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা নিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি গোপন রাখার অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষিজমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি উর্বরতাও হারিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
যদিও ভূমি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, খবর পেলেই তাঁরা অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, অনেক কর্মকর্তা আবার এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
এদিকে, উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পরিকল্পনাহীনভাবে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে তা দীর্ঘমেয়াদে উর্বরতা হারাবে এবং উপজেলার কৃষিজমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে।
স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মাটি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। এতে শুধু কৃষি জমির ক্ষতি নয়, সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলপুর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা মো. সালাম মিয়া জানান, হিলালপুরে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খননের খবর পেয়ে তিনি তা বন্ধ করতে গিয়েছিলেন। একইভাবে ঝিলুয়া হাওড় থেকেও মাটি কাটতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে শিবপাশা ও কাকাইলছেও ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁরা এসব বিষয়ে অবগত নন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
