ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার

আবাসন গিলছে কৃষি জমি, খাদ্য সংকটের শঙ্কা



কৃষি

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৯ মাস আগে) ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

agribarta

অপরিকল্পিত আবাসন, যত্রতত্র বাজারসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণে খুলনা অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটেউটের তথ্যমতে, প্রতি বছরই এক শতাংশের বেশি কমছে কৃষি জমি। কোনো কোনো উপজেলায় এক দশকে ৫০ শতাংশ আবাদি জমি অনাবাদি হয়েছে।

কৃষিবিদরা বলছেন, পতিত জমি চাষের আওতায় আনা আর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব না হলে দিন দিন এই অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে।

মাত্র এক বছর আগেও ডুমুরিয়া উপজেলার যে জায়গায় ধান, সবজিসহ নানা জাতের ফসল চাষ হতো। অথচ সময়ের ব্যবধানে জায়গাটিতে এখন বাজার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনায় কৃষি জমিতে আবাসন প্রকল্প না থাকার নির্দেশনা থাকলেও গত এক দশক ধরে খুলনাঞ্চলে এমন বাজার, কিংবা আবাসন নির্মাণ হচ্ছে কোনো নিয়ম না মেনেই। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটেউটের তথ্য মতে, গত এক দশকে খুলনা জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি আবাদ কমেছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে তথ্য বলছে, গত এক দশকে খুলনা জেলায় কৃষি জমি কমেছে ১৫ হাজার ৪৪ হেক্টর, বাগেরহাটে কমেছে ১৯ হাজার ৫০১ হেক্টর। এছাড়া সাতক্ষীরায় ১৮ হাজার ৪২৩ হেক্টর, যশোরে ১৯ হাজার ১১২ হেক্টর, নড়াইলে ৭ হাজার ৯৬২ হেক্টর, ঝিনাইদহে ১৩ হাজার ৫২২ হেক্টর, মাগুরায় ১০ হাজার ৩০ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৮ হাজার ৭১৩ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ৩ হাজার ৭৪২ হেক্টর ও মেহেরপুরে ১৩ হাজার ৪৪৯ হেক্টর কৃষি জমি কমেছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের জরিপ হয়, জরিপে আশঙ্কাজনক হারে কৃষি জমি কমতে দেখেছি আমরা। বিশেষ করে শহর সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে অপরিকল্পিত আবাসন হচ্ছে প্রতি বছরই গড়ে ১ শতাংশের ওপরে কৃষি জমে কমছে। সবশেষ পাঁচ বছরে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় কৃষি জমি কমেছে ৪০ শতাংশ। কৃষি জমি এভাবে কমতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমি বেচাকেনার সময় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে না পারা, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার আবাসন প্রকল্পের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, কৃষি জমি রক্ষায় অপরিকল্পিত আবাসন ও ভূমির ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর তৈরি করা দরকার। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে যেভাবে আবাসন গড়ে উঠছে তা আশঙ্কাজনক। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবেই। এ কারণে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে সমন্বিত পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। কৃষি জমি রক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা যেতে পারে। উপজেলা পর্যায়ে প্লট তৈরির প্রকল্প নেয়া যাবে না। কৃষি জমি সুরক্ষা আইন ২০১৬ খসড়া প্রণয়ন হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এই আইনটি বাস্তবায়ন করা গেলে অপরিকল্পিত ভূমির ব্যবহার কমানো যাবে।

অন্যদিকে কৃষিবিদরা বলছেন, পতিত জমি চাষের আওতায় আনা আর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব না হলে দিন দিন এই অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে, যা জেলাসহ জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে। 

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর রিফাত জাহান উষা বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে, উল্টোদিকে কমছে কৃষি জমি। ফলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার একটা শঙ্কা থেকেই যায়। এজন্য সব পতিত জমি ফলনের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়ও তৈরি ফসল উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারও করতে হবে। ভূমির নিবিড়তা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদনও বাড়বে। এছাড়া নতুন নতুন গবেষণা করে এই অঞ্চলে লবণ সহিষ্ণু বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এজন্য গবেষণা সরকারি বাজেট বাড়াতে হবে। এসব কাজ করা গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।’\

যদিও কৃষি অধিদফতরের দাবি, নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে তারা।