দেশের ১০টি ফসলের উৎপাদন খরচ নির্ধারণে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘ফসলের উৎপাদন খরচ জরিপ-২০২৫’ শিরোনামে এই প্রকল্পে চার হাজার ৭৯৫ জনের ভ্রমণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা—যা মোট বাজেটের ৩৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই বিপুল ভ্রমণ ব্যয় ঘিরে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত সচিব মো. ছায়েদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত একটি পর্যালোচনা সভায়ও এই ভ্রমণ ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ করা হয়েছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে আউশ, আমন, বোরো, গম, আলু, পাট—এই ছয়টি প্রধান ফসল ছাড়াও ভুট্টা, পেঁয়াজ, আম ও বেগুনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সারাদেশে জরিপ চালিয়ে চার কোয়ার্টারে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বিবিএস বলছে, প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের উৎপাদন খরচ, ফলন ও উৎপাদনশীলতার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হবে, যা ভবিষ্যতে কৃষিনীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। এটি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও কৃষি পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর থেকে কমিয়ে দুই বছর ছয় মাস করার পাশাপাশি, কম্পিউটার, সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, ভেন্যু ভাড়া, মেরামত খাতসহ বেশ কিছু খরচ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয়, আগে থেকে কেনা ট্যাবলেটগুলো ব্যবহার করে জরিপ পরিচালনা করা গেলে নতুন করে ট্যাব কেনার প্রয়োজন নেই।
প্রকল্পের আওতায় জরিপ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ২ কোটি ৬০ লাখ, সেমিনার ও কনফারেন্সে ৭০ লাখ, সফটওয়্যার ও কম্পিউটার খাতে মিলিয়ে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অফিস ফার্নিচার, যানবাহন, আউটসোর্সিং জনবল, পেট্রল ও মনিহারি দ্রব্যাদি মিলিয়ে বাকিটুকু ব্যয় হবে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা সৃষ্টি করেছে ১০ কোটিরও বেশি টাকার ভ্রমণ খরচ।
বিবিএসের কৃষি অনুবিভাগের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত গ্রেড অনুসারে ভ্রমণ ভাতা পাবেন এবং প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রতিটি খাত ও কার্যাবলির যুক্তিযুক্ত ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
