চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহে ভুট্টা চাষে এসেছে বাম্পার সাফল্য। জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় ভুট্টা ক্ষেত এখন পরিপূর্ণ সোনালি শস্যে ঢেকে গেছে। কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে ফিরেছে হাসি, যদিও বাজারে কাঁচা ভুট্টার মূল্য নিয়ে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভুট্টার ফলন আশানুরূপ হয়েছে। তবে খরার প্রভাবে কিছু এলাকায় ভুট্টার মোচা একটু হালকা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেতেই গাছে ভুট্টা শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও অধিকাংশ মাঠে মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। কৃষকদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও হাসিমুখে অংশ নিচ্ছেন মাঠের কাজে।
সদর উপজেলার ভুট্টা চাষি আহমদ আলী জানান, “কাঁচা ভুট্টার দাম এখন প্রতি মণ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকার মধ্যে। ফলন ভালো হলেও এই দামে লাভের অঙ্ক কমে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, চাষি তাহের মণ্ডল বলেন, “শুকনো ভুট্টার দাম তুলনামূলক ভালো—প্রতি মণ ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেকেই ভুট্টা শুকিয়ে ঘরে মজুত করছেন।”
ইশারত আলী নামে আরেক কৃষক জানান, “প্রতি বিঘায় চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ মণ কাঁচা ভুট্টা। জমির লিজ, মাড়াই ও শ্রমিক খরচ বাদ দিলে বিঘাপ্রতি লাভ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো হতে পারে।”
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ১৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। মানভেদে প্রত্যাশিত ফলন বিঘাপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ মণ পর্যন্ত হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, “ভুট্টার জন্য অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আশা করছি, কৃষকেরা এর সুফল পাবে। তবে ফলনের প্রকৃত চিত্র পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভুট্টাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যে আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে নিরলসভাবে কাজ করছে।”
দেশে ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহার যেমন—পোলট্রি ফিড, খাদ্যপণ্য, শিল্প ও জ্বালানি উৎপাদনে বেড়ে চলেছে, তবু সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ভুট্টা সংগ্রহে এখনও কার্যকর বাজারনীতি গড়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন অনেক চাষি।
