ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার

খরায় চৌচির বরেন্দ্রর মাঠ, নলকূপেও মিলছে না পানি



কৃষি

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৭ মাস আগে) ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:১৭ অপরাহ্ন

agribarta

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় চরম সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। শত শত বিঘা জমিতে ধান চাষ হুমকির মুখে, কারণ গভীর নলকূপ দিয়েও মিলছে না প্রয়োজনীয় পানি। কৃষকেরা এখন আশঙ্কা করছেন—সেচ সংকটে ফসল মাঠেই পুড়ে যেতে পারে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিয়ামতপুর উপজেলার খড়িবাড়ী মাঠসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। গভীর নলকূপ স্থাপন করেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ফসল রক্ষা করতে গিয়ে অনেক কৃষক বেসামাল হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় কৃষক শাহাদত হোসেন বলেন, “আমি নিজের খরচে ৩০০ ফুট গভীর নলকূপ বসিয়েছি, তাও পানির দেখা নেই। ধানের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, ফসল এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের লাইন বাড়ানোর জন্য অফিসে ধরনা দিয়েও কোনো সমাধান পাইনি।”

খড়িবাড়ী এলাকার প্রায় এক হাজার বিঘা জমির ধান চাষ এখন ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BMDA) সূত্র জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্তমানে চার হাজার গভীর নলকূপ এবং প্রায় ৫৬ হাজার অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন হচ্ছে। তবে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ইতোমধ্যে ১৮০ থেকে ২০০ ফুটের নিচে নেমে গেছে।

বিএমডিএ নওগাঁ রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, “হার্ড বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সেচঘণ্টা ৯৮০ ঘণ্টা। এত কম পানিতে বোরো ধান চাষ সম্ভব না। এ কারণে আমরা কৃষকদের কম পানি দরকার হয় এমন বিকল্প ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।”

কৃষকেরা বলছেন, একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে, অন্যদিকে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে নলকূপ সচল রাখা যাচ্ছে না। ফলে সেচ বন্ধ হয়ে ধানের শীষে পানি দিতে না পেরে ফসল পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি পানি সংকট ও বিদ্যুৎ সমস্যার প্রতিবাদে নিয়ামতপুরে মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। তাদের দাবি, শুধু পরামর্শ নয়, সরকারকে কার্যকর সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

গবেষণা বলছে, বরেন্দ্র এলাকায় প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১ থেকে ২ ফুট করে নিচে নামছে। এই গতিতে চলতে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ অচল হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই বিকল্প ফসল, জলাধার সংরক্ষণ এবং সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের উদ্যোগ না নিলে বরেন্দ্রের কৃষি ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।