ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার

কেমিক্যাল আতঙ্কে আম ধ্বংস: কৃষকের ঘামে জল, তবু মূল্য নেই?



কৃষি

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৫ মাস আগে) ৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৫১ অপরাহ্ন

agribarta

বাংলাদেশে এখন আমের মৌসুম। মাঠভরা সোনালি স্বপ্ন নিয়ে কৃষকের চোখে-মুখে হাসি থাকার কথা। সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল তুলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় এটি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে একটি বিষয় কৃষকের সেই স্বস্তিকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে—‘কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম’ নিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক এবং নির্বিচার ধ্বংসের ঘটনা।

সদ্য সাতক্ষীরায় প্রশাসন প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কেজি আম ধ্বংস করেছে শুধুমাত্র রাসায়নিক ব্যবহারের অভিযোগে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ধ্বংস কতটা বৈজ্ঞানিক বা ন্যায়সঙ্গত ছিল?

বিশ্বের বহু দেশ এবং বাংলাদেশেও কিছু অনুমোদিত ফল পাকানো রাসায়নিক রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ইথোফন (Ethephon)। এটি একটি প্লান্ট গ্রোথ হরমোন, যা ফলকে দ্রুত ও অভিন্নভাবে পাকতে সহায়তা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), FAO এবং Codex Alimentarius Commission—সকলেই এটি নির্ধারিত মাত্রায় নিরাপদ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

বাংলাদেশে ইথোফনের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা (MRL) হলো ২.০ mg/kg। ইথোফন সাধারণত ফলের বাইরের খোসায় সীমিত থাকে, পানিতে দ্রবণীয়, এবং ধুয়ে বা খোসা ফেলে দিলে তা কার্যত ঝুঁকিমুক্ত হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভোজ্য অংশে কোনো ক্ষতিকর রেসিডিউ থাকে না।

তবুও কিছু ভুল ধারণা ও অজ্ঞতার কারণে, শুধুমাত্র ‘কেমিক্যাল’ শব্দ শুনেই ফল ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। অথচ ‘কেমিক্যাল’ শব্দটি নিজেই ভয়ংকর নয়, বরং সেটি কী ধরনের, কতটা ব্যবহার হয়েছে, সেটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ কি না—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের মাধ্যমে খুঁজতে হয়।

যে কোনো খাদ্য বা ফলকে ক্ষতিকর ঘোষণার আগে বিশ্লেষণমূলক যাচাই ও পরীক্ষার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি। শুধু অনুমান বা সন্দেহের ভিত্তিতে ফল ধ্বংস করা, কৃষকের প্রতি যেমন অবিচার, তেমনি কৃষি অর্থনীতির জন্যও বড় ক্ষতি।

সামগ্রিকভাবে করণীয় কী হতে পারে?

  • প্রতিটি জব্দকৃত আম ল্যাব টেস্ট ছাড়া ধ্বংস নয়: বৈজ্ঞানিকভাবে রেসিডিউ টেস্ট করেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • ইথোফনের মাত্রা সীমার মধ্যে হলে বাজারজাতকরণ অনুমোদন: নিরাপদ হলে কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
  • বাজারে অযোগ্য হলেও বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ: ফল ধ্বংস নয়, তা আচার, পশুখাদ্য বা জৈবসারে রূপান্তর করা যেতে পারে।
  • চাষিদের প্রশিক্ষণ ও চেম্বার স্থাপন: সরকারিভাবে নিরাপদ ফল পাকানো চেম্বার প্রতিটি জেলায় স্থাপন করা উচিত।
  • জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি: বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচারণা ছাড়া কেমিক্যাল আতঙ্ক দূর হবে না।

আমাদের দরকার আতঙ্ক নয়, তথ্যভিত্তিক সচেতনতা। প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টায়ই গড়ে উঠতে পারে একটি মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও কৃষকবান্ধব খাদ্যনীতি।