কাঠগোলাপ—নামটি শুনলেই মনে হতে পারে কাঠ দিয়ে বানানো কোনো গোলাপ। আবার গোলাপ নাম এলেই কল্পনায় ভেসে ওঠে কাঁটা-বেষ্টিত ডালে রক্তিম পাপড়ির কোমলতা। অথচ কাঠগোলাপ গোলাপ নয়, তার নেই কাঁটা কিংবা গোলাপের সুপরিচিত ঘ্রাণ। তবু সে নিজস্ব সৌন্দর্যে এতটাই অনন্য যে তার নামের সঙ্গে ‘গোলাপ’ শব্দটি যেন আপনাআপনিই বসে গেছে।
গাছটি বছরের বড় একটি সময় পাতাহীন থাকে। কিন্তু বর্ষার ছোঁয়ায় যখন তার ডালে ফিরে আসে সবুজ পাতা আর সাদা, হলুদ, গোলাপি বা লালচে ফুলের স্পর্শ—তখন পুরো গাছ হয়ে ওঠে মোহনীয়। কাঠগোলাপের পাপড়ির বাহারি বর্ণ এবং হালকা সুবাস সহজেই পথচলতি মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। অনেকেই এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, মুগ্ধ হন এর প্রশান্ত রূপে।
প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল এই গাছের আদিভূমি। ইংরেজিতে এটি পরিচিত Frangipani নামে। Apocynaceae পরিবারভুক্ত এই গাছ Plumeria গণের সদস্য। মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং ভেনেজুয়েলা থেকে এটি দক্ষিণ ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিস্তৃতি পেয়েছে। রয়েছে বহু প্রজাতি ও নানা ধরনের পাতা—কখনো সূচালো, কখনো গোলাকার, কখনো বা চামচের মতো বাঁকানো।
গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকাল কাঠগোলাপের প্রধান ফুল ফোটার সময়। তবে সারা বছরই এই গাছে কমবেশি ফুল ফোটে। অঞ্চলভেদে এই ফুল পরিচিত নানা নামে—কাঠচাঁপা, গুলাচিচাঁপা, গোলকচাঁপা, চালতাগোলাপ, গরুড়চাঁপা ইত্যাদি। স্থানীয়দের কাছে শুধু সৌন্দর্য নয়, এ ফুলের গাছে রয়েছে কিছু ভেষজ গুণাগুণও।
গাছটির বংশবিস্তার করা যায় কাটিং, অঙ্গজ প্রজনন কিংবা বীজ থেকে। মার্চ-এপ্রিল মাস কাঠগোলাপ গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। উঁচু জায়গা, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস, এবং নিয়মিত পানি এই গাছের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। বসতবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, মন্দির বা অফিস প্রাঙ্গণ—যেকোনো জায়গায় এই গাছের অবস্থান সৌন্দর্যের এক পরিপূর্ণতা এনে দেয়।
চাইলে কাছের কোনো নার্সারি থেকে চারা কিনে বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদে টবে রোপণ করা যায় কাঠগোলাপ। একবার রোপণ করলে অতি যত্ন ছাড়াও এটি নিজের মতো বেড়ে ওঠে এবং নিয়মিত ফুল দেয়।
এই গ্রীষ্ম-বর্ষার প্রাকৃতিক আবহে যখন চারপাশে ধুলো, ক্লান্তি আর একঘেয়েমি—তখন কাঠগোলাপ যেন চোখ ও মন দুটোতেই শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এ যেন প্রকৃতির এক অনবদ্য রূপ, এক নীরব সৌন্দর্য, যা কাঁটার আঘাত ছাড়াও হৃদয়ে ছুঁয়ে যায়।
