
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার দুবলিয়া গ্রামের তরুণ কৃষক মুকুল চন্দ্র রায় লতিরাজ কচু চাষে সফল হয়েছেন। সরকারি সহায়তায় ৫০ শতক জমিতে চাষ করে কম সময়ে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাজারে কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় লতি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় মণ বিক্রি করছেন মুকুল। মৌসুম শেষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা। অন্য চাষিরাও এখন এই কচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় গত বছরের অক্টোবরে কুমিল্লা থেকে বারি-১ জাতের প্রায় ৭ হাজার চারা সংগ্রহ করেন মুকুল। সেগুলো তিনি রোপণ করেন নিজস্ব ৫০ শতক জমিতে। মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে লতিরাজ কচুরলতি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে এর দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। নিয়মিত তিনি প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় মণ লতি বিক্রি করছেন।
মুকুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মৌসুম শেষে লতি বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয়ের আশা করছি। এর বাইরে কচুর কন্দ বিক্রি করেও আরও অর্ধ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কম খরচে বেশি লাভ—এই ফসল এখন আমার ভবিষ্যতের ভরসা।’
তার খেতের সবুজ লতি-পাতা যেন সাফল্যের মালা গেঁথে দিয়েছে। মুকুলের গল্প শুধু একজন কৃষকের সাফল্য নয়, বরং এটি হতে পারে দেশের হাজারো চাষির জন্য নতুন সম্ভাবনার দিশা। সঠিক পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা আর কৃষকের পরিশ্রম—সব মিলিয়ে লতিরাজ কচু হয়ে উঠছে অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন প্রাণ।
একই এলাকার চাষি বিপ্লব রায় জানালেন, ‘মুকুল ভাইয়ের খেতে গিয়ে দেখে এলাম। ফলন দেখে আমি অভিভূত। তাই আগামী মৌসুমে আমিও লতিরাজ কচু চাষ করব।’
আরেক চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে শুধু ধান চাষ করতাম। লাভ তেমন হতো না। এখন মুকুলের সাফল্য দেখে কচু চাষে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আগামী বছর আমি ৩০ শতক জমিতে লতিরাজ চাষ করব।’
খানসামা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল রায় বললেন, ‘লতিরাজ কচুর ফলন ভালো, স্বাদ উন্নত এবং বাজারে চাহিদা বেশি। এজন্য কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষকদের এই উন্নত জাতের কচু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে লতিরাজ কচু দেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে।’
স্থানীয় বাজারে ইতোমধ্যে লতিরাজ কচুর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাদ ও গুণমানের কারণে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাজারে ক্রেতারা জানাচ্ছেন, লতিরাজ কচুর লতি নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় গৃহিণীদের মধ্যে এটি বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লতিরাজ কচু শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, সঠিক সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি দেশব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়বে, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।