www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

লোকসানে বন্ধ খুলনার চার শতাধিক মুরগির খামার


 এগ্রিবার্তা ডেস্ক    ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার, ১১:০৬   পোল্ট্রি বিভাগ


নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কমে আসায় গত বছর লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন খুলনার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মুরগির খামারিরা। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবসায় ভালো প্রবৃদ্ধিও এসেছে। সম্প্রতি দফায় দফায় খাবার, বাচ্চা, ভ্যাকসিনসহ ওষুধের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণও মিলছে না। এতে দিশেহারা খামারিরা। পুঁজি সংকট কাটাতে বিভিন্ন এনজিও-সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তারা।

খামারিরা বলছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হলে অন্যান্য পণ্যের মতো পশুখাদ্যের বাজারও অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে পোলট্রি খাতেও। পাশাপাশি অন্যান্য উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা।

খুলনা পোলাট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন বলেন, মুরগি খামারিরা মহাসংকটে রয়েছেন। করোনার ধাক্কা, খাবার, বাচ্চা, ভ্যাকসিনসহ ওষুধের দাম বৃদ্ধি, পুঁজি সংকটসহ নানা কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন খামারিরা। লোকসানে পুঁজি হারিয়ে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। আর খামার বন্ধে এর প্রভাব পড়ছে পোলট্রি ফিড ব্যবসায়।

জেলার কয়রা উপজেলার পশ্চিম দেয়াড়া গ্রামের ব্রয়লার মুরগি খামারি আজমল হোসেন বলেন, এক বছরের ব্যবধানে ২ হাজার ১০০ টাকার পোলট্রি ফিড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। খাবার ও বাচ্চার দাম বাড়লেও মুরগি বিক্রিতে দাম পাচ্ছেন না। এমনকি খামারে শ্রম দেয়ার পারিশ্রমিকও উঠছে না।


আজমল বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৫-১২০ টাকা হলেও পাইকারিতে তা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। আর সোনালি মুরগি কিছুদিন আগে ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার ওপরে হলেও পাইকারিতে সাড়ে ৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিসংকটে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। তবে পুঁজি পেলে বড় আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান ।

বটিয়াঘাটা উপজেলার লেয়ার মুরগি খামারি মিজানুর রহমান জানান, ব্যক্তিউদ্যোগে খামার করেন তিনি। এক হাজার লেয়ার মুরগি পালন করে গত এক চালানে ৮৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন। তবে এখন খাবার ও বাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় লাভ হচ্ছে না। মূলধন তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও বহু খামারি অব্যাহত লোকসানে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। অধিকাংশ উপজেলা পর্যায়ের অফিসে বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারিদের কোনো তালিকা নেই।

খামারিদের অভিযোগ, দুই বছরে উপজেলা পর্যায়ে মুরগি পালনের ওপর কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। এমনকি রোগ নিয়ন্ত্রণ, বাজারজাত, উদ্বুদ্ধকরণ তথা খামারিদের উন্নয়নে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মণ্ডল জানান, জেলায় তালিকাভুক্ত লেয়ার খামার রয়েছে ৯৮৭টি। ব্রয়লার খামার রয়েছে ১ হাজার ৯২৭টি। আর নিবন্ধনকৃত রয়েছে ৩৭টি লেয়ার ও ৪০টি ব্রয়লার খামার। এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত চার শতাধিকের মতো মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন আমন ওঠা শুরু হচ্ছে। মুরগির খাবারের দামও কমবে।

অরুণ কান্তি মণ্ডল আরো জানান, ‘খামারিদের সব রকম পরামর্শ, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। কলেরা ছাড়া কোনো ভ্যাকসিন সংকট নেই। খামারিদের ঋণ পেতেও ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিই আমরা। এছাড়া করোনার সময় খামারিদের কিছু টাকাও দেয়া হয়েছিল।




  এ বিভাগের অন্যান্য