ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

ইউক্যালিপটাস-আকাশমণির বনায়নে ক্ষতির মুখে প্রকৃতি



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৩ সপ্তাহ আগে) ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

agribarta

গাছকে বলা হয় প্রকৃতির পরম বন্ধু। তবে, সব গাছই যে পরিবেশের জন্য উপকারী, তা নয়। কিছু গাছ দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃতি ও মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) টিলাভূমিতে করা বনায়নে এমন কিছু গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ মাটি ও বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে, কমিয়ে দিচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাজি-কালু টিলা’ ও ‘অস্ট্রেলিয়া টিলা’ এলাকায় গাছপালার বিস্তৃতি দেখা গেলেও, এর বেশিরভাগই আকাশমণি। এসব গাছ দ্রুত বাড়ে, তবে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে নেয়। ফলে অন্যান্য উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না, কমে গেছে পাখিদের সংখ্যাও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গাছগুলোর ফুল ও রেণু বাতাসে ছড়িয়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে, এমনকি হার্টের রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। এছাড়া, এগুলোর পাতা ও গুঁড়ি থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ ক্ষুদ্র প্রাণীদের জন্যও ক্ষতিকর।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক তানজিয়া জাহান মনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব গাছ লাগানো হয়েছে, তার মধ্যে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, অন্য গাছ জন্মাতে দেয় না এবং বাতাসের গুণগত মান নষ্ট করে। আমরা চাই, এগুলো কেটে তার জায়গায় স্থানীয় ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হোক।”

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধারিত্রীর জন্য আমরা’র (ধরা) কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল করিম কিম জানান, “আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো বনায়ন নয়, বরং এগুলো মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃত বনায়ন করতে হলে স্থানীয় জলবায়ু উপযোগী গাছ লাগাতে হবে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য উপকারী হবে।”

শাবিপ্রবির ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, “আমরা স্বীকার করছি, পূর্বের বনায়নে ভুল হয়েছে। অধিকাংশ গাছই আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এসব গাছে পাখির বাসার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো থাকে না, ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে এসব গাছ অপসারণ করে ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।”

পরিবেশবিদ ও শিক্ষার্থীদের দাবি, পরিকল্পিত ও টেকসই বনায়ন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।