ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

লক্ষ্মীপুরের কৃষি সমৃদ্ধিতে শাহজাহানের কেঁচো সার



ক্যারিয়ার

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ সপ্তাহ আগে) ১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

agribarta

লক্ষ্মীপুরের তরুণ উদ্যোক্তা মো. শাহজাহানের তৈরি কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট এ অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জেলার কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা এই সার জমিতে ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

এছাড়া কৃষি অফিসের পরামর্শে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে কৃষকরা তার উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যাপকভাবে ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন।

জানা যায়, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের মৃত নজিব উল্লাহর ছেলে মো. শাহজাহান এক সময় ব্রিক ফিল্ডের মাঝির কাজ করতেন। পরে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টায় ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২ টি রিং দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন।

আস্তে আস্তে তার এ সারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা সবজিতে ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েন। তখন থেকে এ জৈব সারের চাহিদা বাড়তে থাকায় ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট ট্রেডার্স’ নামে একটি খামার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের পৃথক ১১টি হাউজ তৈরি করেন।

প্রতি হাউজে ১২-১৪ কেজি গোবর ও পাঁচ কেজি কেঁচো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ টন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তার এ খামার থেকে প্রায় ১২ টন কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। যা তিনি প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন।

কৃষক দেলোয়ার হোসেন ও ওসমান বলেন, কেঁচো সার ব্যবহার করে সবজি ও ধান ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এদিকে সবজি চাষ বেশি হয়। আর কেঁচো সার সবজির জন্য উপকার। এছাড়া রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম করায় ফসল উৎপাদনে খরচ কমেছে এবং ফলনও ভালো হচ্ছে।

মো. শাহজাহান বলেন, কৃষকেরা জমির গুণাগুণ ঠিক রেখে অল্প খরচে নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদন করতে পারে এ লক্ষ্যে আমি ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট ট্রেডার্স' খামার নিয়ে কাজ করছি। প্রতি মাসে আমার খামারে উৎপাদিত দেড় লাখ টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি। এতে আমার প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এছাড়া আমার কাছে প্রায় ২'শ কেজির মতো কেঁচো রয়েছে। সেখান থেকেও বিক্রি করছি।

শাহজাহান আরও বলেন, বর্তমানে অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকছে। আমার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ২৫ জন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্বল্প পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করছেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান ইমাম বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা শাহজাহানের ভার্মি কম্পোস্ট খামারে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন ও দিকনির্দেশনা দিয়েছি। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেঁচো সারের জুড়ি নেই। এ জৈব সার মাটির পানি ধারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব। এ কারণে প্রতিনিয়ত কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কেঁচো সারের চাহিদা বাজারে ব্যাপক বেড়েছে। নতুন নতুন অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এ সার উৎপাদন করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে ঝুঁকি ও পরিশ্রম দুটোই কম।