সরকার সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ২০২৫ সালের ১৫ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই নির্দেশনা শুধু সরকারি পর্যায়েই নয়, বরং বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে রয়েছে পরিবেশগত নানা বৈজ্ঞানিক কারণ। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ দ্রুতবর্ধনশীল ও আগ্রাসী প্রজাতি হিসেবে পরিচিত। এদের শিকড় মাটি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি শোষণ করে নেয়, ফলে মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মাটি হয়ে ওঠে অনুর্বর। বিশেষ করে শুষ্ক বা মৌসুমী জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে এই গাছগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
উপরন্তু, ইউক্যালিপটাসের পাতায় থাকা বিষাক্ত যৌগ মাটিতে পড়ে তা বিষাক্ত করে তোলে, যার ফলে আশপাশে অন্য কোনো উদ্ভিদ সহজে জন্মাতে পারে না। এই গাছগুলোতে দেশীয় পোকামাকড়, পাখি বা অন্যান্য প্রাণী আশ্রয় বা খাদ্য পায় না, ফলে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য ভেঙে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে, সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করছে। সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যাতে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা পায় এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বিকশিত হয়। এই উদ্যোগ শুধুই পরিবেশ রক্ষার একমাত্র উপায় নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক প্রকৃতি-ভিত্তিক উন্নয়ন ধারণার অংশ।
পরিবেশবান্ধব এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সকল নাগরিক, প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে সচেতন ও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণের এই যাত্রায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে এসে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশি গাছ রোপণ করা শুধু একটি কর্মসূচি নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ও প্রাণবৈচিত্র্যময় পৃথিবী গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা।
