ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

ঝিনাইদহে পাঁচ শত প্রজাতির ১০ হাজার গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে ’গাছ বাড়ি’



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৬ মাস আগে) ২৮ মে ২০২৫, বুধবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:০৯ অপরাহ্ন

agribarta

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের লক্ষদিয়া গ্রামে সবুজে ঘেরা এক আশ্চর্য ভুবনের নাম—‘গাছবাড়ি’। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠেছে গাছের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে জন্ম নেওয়া এক অনন্য জীবন্ত সংগ্রহশালা। এই গাছবাড়ির স্বপ্নদ্রষ্টা ও নির্মাতা সূচিশিল্পী আমিনুল ইসলাম, যিনি ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও হৃদয়ে ধারণ করেন গ্রামের প্রকৃতিকে, সবুজ গাছপালাকে, বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষদের প্রতি এক গভীর মমত্ববোধ।

২০১৪ সালে তিনি ১৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন এই অনবদ্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল, যার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ। এই বাড়িতে রয়েছে প্রায় ১০,০০০ গাছ, যা শুধু শোভা নয়, বরং শিক্ষার, গবেষণার এবং সংরক্ষণের এক জীবন্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। আমিনুল ইসলামের ভাষায়, এটি এখন আর শুধুই একটি বাড়ি নয়—এটি একটি গাছের গবেষণাগার, একটি জৈব-সংগ্রহশালা।

এই গাছবাড়িতে রয়েছে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমাহার। সৌন্দর্যবর্ধক নানা ধরনের গাছও স্থান পেয়েছে এখানে—যেমন ক্যাসিয়া, উইসটেরিয়া, কিগেলিয়া, আমাজন লিলি, আরও বহু দুর্লভ প্রজাতি। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারত, ইতালি, পর্তুগালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা গাছগুলো এনে লাগিয়েছেন তিনি তাঁর এই স্বপ্নের বাড়িতে।

গাছবাড়িটি কেবল বৃক্ষের ঠিকানাই নয়, এটি পাখিদেরও এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নানা প্রজাতির পাখি প্রতিদিন এসে এখানে বাসা বাঁধে, ফুল ও ফল থেকে খাবার সংগ্রহ করে। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেও তিনি প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে নিজ হাতে খাবার দেন তাদের। এই নিঃস্বার্থ সেবা তাঁর মনকে শান্তি দেয়, তৃপ্তি দেয়।

জীবনে যা আয় করেছেন তার সিংহভাগই ব্যয় করেছেন গাছ সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণে। গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য রয়েছে তিনজন স্থায়ী কর্মচারী। প্রতি মাসে ঢাকায় থাকা অবস্থান থেকে নিজ হাতে নতুন প্রজাতির গাছ কিনে নিয়ে আসেন এবং বাড়ির সংগ্রহে যোগ করেন। এই ধারাবাহিকতায় প্রতি মাসেই বাড়ছে গাছের সংখ্যা, বাড়ছে প্রাণের স্পন্দন।

‘গাছবাড়ি’ এখন শুধু একটি বাড়ির নাম নয়, এটি এক দর্শনীয় স্থান, এক শিক্ষার কেন্দ্র, এক নীরব প্রতিবাদ যেখানে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের গুরুত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই সংগ্রহশালাকে একটি গবেষণার প্ল্যাটফর্মে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন আমিনুল ইসলাম। তার বিশ্বাস, একদিন এই গাছগুলো দেখে কেউ হয়তো অনুপ্রাণিত হবে, কেউ গবেষণার বিষয় খুঁজে পাবে, আর সবচেয়ে বড় কথা—ভালোবাসবে গাছকে, ভালোবাসবে প্রকৃতিকে।

এভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এমন একটি সংগ্রহশালা শুধু শ্রদ্ধারই নয়, বরং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যখন পরিবেশ বিপর্যয়, বন উজাড় ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, তখন গাছবাড়ি যেন হয়ে উঠেছে এক নতুন স্বপ্নের নাম—সবুজ পৃথিবীর আশাবাদী প্রতিচ্ছবি।

পরিবেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ