ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরছে তালগাছের চারা, রোপণের পর নেই তদারকি



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৬ মাস আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৫৮ অপরাহ্ন

agribarta

কয়েক বছর আগে বরিশালের চৌহতপুর, দিয়াপাড়া বারইজ্জার হাট পর্যন্ত গ্রামে ৪শ তালবীজ বপন করা হয়। সঙ্গে ছিল প্রায় ৭৫টি তালচারা। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় মৃতপ্রায় ৬টি কোনো রকমে টিকে আছে, বাকি সবই মরে গেছে।

এভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে একাধিক তালবীজ ও চারা রোপণের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরে যাচ্ছে গাছগুলো। একদিকে কৃষক বলছে চারা রক্ষায় কোনো তদারকি নেই। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে তদারকির জন্য বরাদ্দ নেই। এমন দোটানায় মরে যাচ্ছে রোপিত তালবীজ ও চারা। ২ শতাংশ চারাও রক্ষা করতে না পারায় ঠেকানো যাচ্ছে না বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যাও।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি বিভাগ বলেছে, এখন এসব স্থানে কিছু তাল চারাগাছের অস্তিত্ব মিলেছে। পরিণত বীজ ও পরিচর্যার অভাবেই বপন ও রোপণ করা তালবীজ ও চারার ৯৮ শতাংশেরই মৃত্যু ঘটে।

জানতে চাইলে বরিশাল সদরের কৃষক মো. জিয়া উদ্দীন বলেন, তিন বছর আগে আমার গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তায় ৪০০ তালবীজ লাগিয়েছিলাম। প্রথম অবস্থায় আমি নিজেই পরিচর্যা করায় কিছু গাছ টিকে ছিল। পরে পরিচর্যা বন্ধ হওয়ায় আগাছা জন্মে গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার তালগাছ লাগাতে বলে কিন্তু কোনো বরাদ্দ দেয় না পরিচর্যার জন্য। নিজের কাজ রেখে কেন আমরা তালগাছের পরিচর্যা করব।

একই অবস্থা চরআইচা গ্রামের, ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট এখানে ৩৭৫টি চারা ও বীজ লাগানো হলেও এখন তার একটিরও খবর নেই। চর করমজা, সোলনা ও মংগলহাটা গ্রামের চিত্রও অনুরূপ গ্রামবাসীর দাবি, উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর আর কেউ চারা বা বীজের খবর নেয়নি, করা হয়নি পরিচর্যা। ফলে কার্যত ভেস্তে গেছে বজ্রপাত ও মাটিক্ষয়বিরোধী কর্মসূচি।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল বলেন, এবারে তালচারার যা দেখেছেন তা আগামীতে এসে এটুকুও পাবেন না। তালবীজ বপন উদ্বোধনের সময় বেশ ঢাকঢোল পেটানো হয়। পরে তা রক্ষার কোনো আয়োজন থাকে না। কৃষি বিভাগের কর্তারা তাদের চাকরি বাঁচাতে যা করার তা করে, আমাদের কোনো উপকার হয় না।

আরেক বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, তালগাছের জন্য যে বীজ দেওয়া হয় তা অনেকটাই মানহীন। বেশিরভাগ বীজ চারা পর্যন্ত গড়াচ্ছে না। এরপরও গজানো চারাগুলো জঙ্গলের চাপে মরে যায়। ভালো বীজ ও পরিচর্যা ছাড়া তালগাছ রক্ষা করা যাবে না।

তালগাছ সংক্রান্ত দ্রুত নির্দেশনা পেয়ে গৃহস্থ থেকে তড়িঘড়ি বীজ সংগ্রহ করে তা বপন করা হয়। এ জন্য স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। কিন্তু তালগাছের ফল ও অনেক বিলম্বিত হওয়ায় কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণেই টিকছে না তালগাছ প্রচেষ্টা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাকিলা আহমেদ বলেন, আমরা নার্সারি থেকে তালবীজ সংগ্রহ করি। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি কিন্তু তালগাছে ফল আসতে প্রায় ১৫ বছরের মতো সময় লেগে যায়। এত দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কৃষকদের বুঝিয়েও কাজ হয় না। তারা তালচারা উপড়ে সেখানে অন্য গাছ লাগিয়ে দেয়।

এর আগে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার তালবীজ রোপণের মাধ্যমে বজ্রপাতনিরোধক কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছরও রয়েছে অনুরূপ কর্মসূচি।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের আহ্বানে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বন বিভাগ ও কিছু এনজিও এসব চারা ও বীজ বপন-রোপণ করেছিল। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মতে এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় প্রায় ২৫ হাজার তালবীজ ও চারা বপন-রোপণ করা হলেও ফলাফল এসেছে হতাশাজনক। তাদের মতে সংগ্রহ করা বীজ বপন করে কাজ হচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে হর্টিকালচারের মাধ্যমে তালগাছের চারা করে তা রোপণের ব্যবস্থা করা হলে ভালো ফলাফল মিলবে। তবে এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই বলে তারা জানান।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোসাম্মৎ মরিয়ম বলেন, বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে কৃষক, তাই আমরা চাই মাঠে-ময়দানে তালগাছ থাকুক। এ কারণে গত ১০ বছরে এই জেলায় ২৪ হাজার ৯৬৭টি তালবীজ বপন ও চারা রোপণ করা হয়েছে।

বজ্রপাত ঠেকাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে তালগাছ লাগানোর নির্দেশ ছিল আমাদের ওপর। তবে আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে হর্টিকালচারের মাধ্যমে তালচারা উৎপাদন করে রোপণ করা হলে সেটি বেশি ফলপ্রসূ হতো।

পরিবেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ