ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার

ঋতুর রানি শরতে প্রকৃতি হয় কোমল, শান্ত-স্নিগ্ধ ও উদার




Notice: Trying to get property 'cname' of non-object in /home/agribart/public_html/article.php on line 22

এগ্রিবার্তা ডেস্ক:

(১ বছর আগে) ১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, ৫:১৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:২৯ অপরাহ্ন

agribarta

বাংলাদেশের ছয় ঋতুর মধ্যে তৃতীয় ঋতু হচ্ছে শরৎকাল। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে হয় শরৎ। শরৎকে ইংরেজিতে ‘অটাম’ বলা হলেও উত্তর আমেরিকায় একে ‘ফল’ হিসেবে ডাকা হয়। আমাদের দেশে প্রাণের সজীবতা, রং, রূপ, রস ও স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে শরৎ। শরৎ আমাদের মাঝে বিভিন্ন উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। বর্ষার বৃষ্টি শেষে আগমন ঘটে শরতের। শরৎ হলো বর্ষার পরবর্তী ঋতু। বর্ষার অতিবর্ষণ ও অবিরাম মেঘের ডামাডোল থেমে প্রকৃতিতে নেমে আসে শান্ত-সুনিবিড় পরিবেশ। দূর্বাঘাসে তার স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়। তাই তো শরতের রূপবৈচিত্র্য উপমাহীন।

ঋতুর রানি শরতে প্রকৃতি হয় কোমল, শান্ত-স্নিগ্ধ ও উদার। শ্রাবণ শেষে বিরামহীন বাদলের সমাপ্তি ঘটলেই প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে। এ সময় আকাশের বুকে ভেসে বেড়ায় সাদা-শুভ্র পেঁজা তুলোর মতো মেঘমালা। মাটিতে ও সবুজ ধান গাছের ডগায় রোদ আর ছায়ার লুকোচুরি খেলা করে। মাঠে মাঠে সবুজ ধান গাছের চারা খুশিতে নেচে ওঠে। ঘাসে শিশির পড়ে। সূর্যের কিরণ হয় উজ্জ্বল আর বাতাস হয় অমলিন।

ভাদ্রের ভোরের সূর্য মিষ্টি আলোর স্পর্শ দিয়ে প্রকৃতির কানে কানে ঘোষণা করে শরতের আগমনী বার্তা। তাই শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল। শরৎ মানেই ঝকঝকে গাঢ় নীলাকাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা। শরতের মতো গাঢ় নীল আকাশ আর কোনো ঋতুতে দেখা যায় না। শোভা ছড়ানো ফুলের বাগান আর শস্যের শ্যামলতায় উদ্ভাসিত হয় শরৎ। সোনা ঝরা রোদ, নদীর পাড়ে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া সাদা সাদা কাশফুলের সমাহার, পাখ-পাখালির দল মহাকলরবে ডানা মেলে আকাশে মালা গেঁথে উড়ে চলে। শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়ার মধুর ধ্বনিতে মুখরিত হয়।

শরৎকালের রাতে জ্যোৎস্নার ঝলমলে আলো অপরূপ রূপ নিয়ে আসে। আকাশটা জোছনায় ভরে যায়। মেঘমুক্ত আকাশে যেন জোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে রূপকথার পরিরা ডানা মেলে নেমে আসে। শরতের আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘের সঙ্গে শৈশবের স্বপ্নরা ঘুরে বেড়ায়। উড়ে বেড়ায় লাটাই বাঁধা কাগজের তৈরি ছোট্ট ঘুড়ি। আনন্দে দোল খায় মন।

ভোরবেলা শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছানো থাকে ঘ্রাণ মেশানো শিউলি ফুল। তাই তো শরৎ মানেই শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে বেড়ানো দিন। এ ছাড়াও শরতের ফুল হচ্ছে হিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, পাখিফুল, পান্থপাদপ, বকফুল, মিনজিরি, শেফালি, কলিয়েন্ড্রা, শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, জবা, কামিনি, মালতি, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম ফুল, বরই ফুল, দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, জয়্ন্তী, শ্বেতকাঞ্চন, রাধাচূড়া, স্থলপদ্ম, বোগেনভেলিয়া ও কাশফুল ইত্যাদি। শরতের ফল হচ্ছে আমলকি, জলপাই, তাল, যজ্ঞডুমুর, করমচা ও চালতা ইত্যাদি।

শরতের আরেকটি দিক হলো—এ সময় মাঠজুড়ে থাকে সবুজ ধানের সমারোহ। ধানের কচিপাতায় জমা হওয়া শিশিরের ওপর প্রভাতের অরুণ আলো মুক্তার মতো দ্যুতি ছড়ায়। আমাদের দেশের কৃষকেরা নবান্নের আশায় দিন গোনে। আর বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবের কথা সবাই জানি। শরৎকাল শারদীয় আরাধনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যেমন উৎসবমুখর করে; তেমনই বিজয়ার বেদনায়ও করে তোলে ব্যথিত। শরৎ বাংলার প্রকৃতিতে আসে শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে, নানামাত্রিক আনন্দের বার্তা নিয়ে।

শরৎ শুভ্রতার প্রতীক। পবিত্রতার চিহ্ন। বর্ষাকালের লাগাতার বৃষ্টি প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়। শরৎ তাই একটু বেশি পূতঃপবিত্র অন্যান্য ঋতু থেকে। দেখলে মনে হয় ঝক্ঝকে ও তক্তকে। বাতাস হয়ে যায় দূষণহীন। মনে বাজে আলাদা গন্ধ, ছন্দ ও রং। ব্যাকুল হয়ে যায় মন।