পাবনার ঈশ্বরদীতে বিডি ক্রিয়েশন নামে একটি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে আশপাশের কয়েক গ্রামের পরিবেশ৷ কেমিক্যালযুক্ত এসব বর্জ্যে তীব্র দুর্গন্ধ থাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কারখানার আশপাশের এলাকায়। এসব বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে কৃষিজমিতে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটছে। কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাধা দিতে সাহসও পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের কয়েকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দাশুড়িয়ার মুনসিদপুর এলাকায় হস্তশিল্প কারখানাটি গড়ে তোলেন পিয়াস হোসেন নামে একজন শিল্পপতি। কারখানা শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাদের ইটিপি প্ল্যান্ট না থাকায় বর্জ্য শোধনাগার না করে সরাসরি অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার নামে ফেলা হচ্ছে পাশের একটি খালে৷ যে খালের মাধ্যমে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত এই পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে৷ এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এ ছাড়া কেমিক্যালের দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পাশাপাশি বসবাসেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা।
এ দিকে কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এতদিন মুখ বুজে এই অমানবিক অত্যাচার সহ্য করলেও সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সবাই।
কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী রুবেল হোসেন নামে একজন জানান, ‘শুরু থেকেই কারখানাটি নিয়ম কানুন না মেনেই বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ফেলছে। এতে ড্রেনের পানি সরাসরি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। ফলে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে। বিশ্রী ধরনের দুর্গন্ধের কারণে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।’
শামসুল আলম নামে একজন বলেন, ‘কারখানার মালিক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। আর অনেকে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দিলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমানে কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলে একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।’
পাবনার ঈশ্বরদীতে বিডি ক্রিয়েশন কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। ছবি: সময় সংবাদ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকায় বসবাসরত একাধিক নারী-পুরুষ জানান, বিডি ক্রিয়েশন ফ্যাক্টরির মালিক অত্যন্ত প্রভাবশালী। কতটা অমানবিক হলে কারখানার দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য আমাদের বসতি এলাকায় ফেলছেন। দিনরাত সব সময় দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেও কারো কোনো ধরনের নজরদারি চোখে পড়েনি। কেমিক্যালের পানি সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ড্রেনে ফেলছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর ড্রেন থেকে সে পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। এতে পর্যাপ্ত ফসল মিলছে না কৃষি জমি থেকে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সবাই।
এ সব বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনেই কারখানা চালাচ্ছেন তারা।
এ সব বিষয়ে পাবনা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর জানান, ২০১৮ সালে বিডি ক্রিয়েশন কারখানা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পেয়েছেন। তবে এলাকাবাসীর যে অভিযোগ তা সত্য প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে সততা মিললে বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অভিযান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘যেহেতু প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়টি আমরা জেনেছি তদন্তে সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
