
কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কৃষি মূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন এই কমিশন গঠন না হলে কৃষকদের আর্থিক দুর্দশা বাড়বে। কৃষি খাত আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) ও পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রান) আয়োজিত ‘কৃষকদের সুরক্ষা: কেন একটি কৃষি মূল্য কমিশন প্রয়োজন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এ দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষি খাতে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে বহুদিন ধরে ডেটা ম্যানিপুলেশনের সংস্কৃতি চলে আসছে। চাহিদা ও জোগানের সঠিক চিত্র না থাকায় বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
কৃষি খাতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা (পারসপেক্টিভ প্ল্যান) তৈরি করছে সরকার, যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এই পরিকল্পনায় মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণীর খাদ্য চাহিদাকেও বিবেচনায় আনা হচ্ছে। ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী কৃষিকে ছয়টি হটস্পটে ভাগ করে নয়টি থিমেটিক এরিয়া ও ২৫টি উপখাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সচিব।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ ও পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে কৃষকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য এগ্রো ইকোনমির বিকাশ জরুরি, যেখানে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ, ওষুধ, তামাকসহ নানা খাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণ থাকলেও দেশের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কৃষি খাতে নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা। এর ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। বক্তারা মেহেরপুর ও রাজশাহীর কৃষকের সাম্প্রতিক আত্মহত্যা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারতের মতো ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) চালুর বিষয়টি বিবেচনায় আছে। তবে পচনশীল পণ্যে সেটি বাস্তবায়নে বাড়তি চিন্তা প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে এ নিয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা শুরু করেছে। তিনি জানান, সরকার ৩৭ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করছে এবং এবার ধান-চালের দাম নির্ধারণে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মিহির কুমার রায় ও ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরমিন্দ নীলর্মী, খানি সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।