২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ এক জটিল ও বহুমাত্রিক সংকটে পরিণত হয়েছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে দূষণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে বায়ু, পানি, মাটি এবং জীববৈচিত্র্য সব ক্ষেত্রেই দূষণের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় দূষণের উৎস হলো শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। অনেক দেশ এখনো কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। এসব কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করছে।
এছাড়া, যানবাহনের ধোঁয়াও বায়ুদূষণের অন্যতম বড় কারণ। শহরাঞ্চলে যানবাহনের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পেট্রোল ও ডিজেলচালিত ইঞ্জিন থেকে নির্গত পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5 ও PM10) মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। যানজটের কারণে যানবাহন বেশি সময় রাস্তায় অবস্থান করায় এই নির্গমন আরও বাড়ছে।
প্লাস্টিক বর্জ্যও ২০২৫ সালে বড় দূষণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে উৎপন্ন হচ্ছে এবং তা নদী, খাল, সমুদ্র ও মাটিতে জমে থেকে পরিবেশ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
কৃষি খাতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে বিষাক্ত উপাদান প্রবেশ করছে। একইভাবে, দ্রুত নগরায়ণের ফলে নির্মাণকাজ থেকে ধুলো ও বর্জ্য ছড়িয়ে বায়ু ও মাটি উভয়ই দূষিত হচ্ছে।
২০২৫ সালে পরিবেশ দূষণে শীর্ষ দেশগুলো
২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রধান কারণ শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিবেশ সূচক অনুযায়ী, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে দূষণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প উৎপাদক এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করছে। ভারতের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, বিশেষত দিল্লি ও কলকাতার মতো বড় শহরগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হলেও এখনও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল এবং প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনেও অন্যতম শীর্ষ দেশ। রাশিয়ায় তেল, গ্যাস ও কয়লা শিল্পের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেশি এবং পরিবেশগত বিধিনিষেধ তুলনামূলক দুর্বল। ইন্দোনেশিয়ায় দ্রুত নগরায়ণ, বন উজাড় ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য বড় হুমকি তৈরি করছে।
এই দেশগুলো একত্রে বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের অর্ধেকেরও বেশি উৎপন্ন করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
সব মিলিয়ে, শিল্প, যানবাহন, প্লাস্টিক বর্জ্য, কৃষি ও নির্মাণ খাত বর্তমানে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য এখনই দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
