www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

বান্দরবানে পাহাড় কেটে ঝিরিতে বাঁধ দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর


 এগ্রিবার্তা ডেস্ক    ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার, ৯:২৩   প্রাণিসম্পদ বিভাগ


বান্দরবান সদরের পর্যটন স্পট রী স্বং স্বং রূপালী ঝরনার পানির একমাত্র উৎস ম্রং ঝিরি। এ ঝিরির মাঝামাঝি জনশূন্য এলাকায় বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁধটির নির্মাণকাজ চলছে।

এ বাঁধটি নির্মিত হলে পানি প্রবাহ শুকিয়ে জেলা সদরের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট রী স্বং স্বং রূপালি ঝরনা বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যটন ও পরিবেশগত কোনো ক্ষতি হতে দেয়া হবে না। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শেষে জনশূন্য এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ঝিরি ভরাট করার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবানের সহকারী পরিচালক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য অফিস বাঁধ প্রকল্পের নামে ম্রং ঝিরিঘেঁষা পাহাড় কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে এসএম আইয়ুব নামের এক ব্যক্তিকে। ম্রং ঝিরির মাঝামাঝি স্থানে এক্সক্যাভেটর দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। এর ফলে ম্রং ঝিরির পানির স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হচ্ছে। মাটি ভরাটের স্থান থেকে নিচের দিকে পানি প্রবাহ কমে গেছে। এখন ওই স্থানে বাঁধ হলে পানি প্রবাহ শুকিয়ে ঝরনাটি বিলীন হয়ে যাবে বলে শঙ্কা করছেন তারা।

গত ২৩ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, নীলাচল কাঁচা সড়কের আনুমানিক ৪০০ ফুট ভেতরে জনশূন্য ম্রং ঝিরিঘেঁষা পাহাড় এক্সক্যাভেটর দিয়ে কাটা হয়েছে। ঝিরির পানির স্তর থেকে আনুমানিক ৯০ ফুট উঁচুতে ৬০ শতক পরিমাণ পাহাড় নির্বিচারে কেটে নিচের ম্রং ঝিরিতে ফেলা হয়েছে। এজন্য ওই স্থানে ঝিরির প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও পানির স্তর থেকে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। সেখানে চালকবিহীন একটি এক্সক্যাভেটর দেখা গিয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসএম আইয়ুব নামের এক ব্যক্তির জমিতে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বাঁধের জন্য আবেদন করেছেন তিনি। প্রকল্পটির জন্য প্রায় ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর কাজ পেয়েছে এসএম কনস্ট্রাকশন, যার স্বত্বাধিকারী পুরু কান্তি তঞ্চঙ্গা। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন আইয়ুব নিজেই।

সূত্র আরো জানিয়েছে, প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি না করে মরা ঝিরিতে বাঁধ সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের মাছ চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন, অনগ্রসর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা পূরণ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, কিন্তু জনশূন্য এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে মৎস্য বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া কোনো প্রবহমান ঝিরিতে বাঁধ দেয়ার কোনো বিধান নেই বলে জানিয়েছে সূত্র।

তবে আইয়ুবের দাবি, তিনি বাঁধের জন্য আবেদন করেননি। সেলফোনে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বাঁধটির অবস্থান যাচাই করেছে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাহাড় কাটা ও ঝিরি ভরাট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। তবে যে পাহাড়টি কেটে ঝিরি ভরাট করা হচ্ছে সেটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘এটি আগে থেকেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমি বান্দরবানে নতুন এসেছি। সব বিষয় এখনো জানি না। তবে নথি অনুযায়ী আইয়ুব নামের এক ব্যক্তি এ বাঁধটির জন্য আবেদন করেছেন। কাজটির বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার আইয়ুব নিজেই। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। আমার কাছে প্রকল্পের কোনো নথি নেই। তবে এ কাজটির জন্য এখনো কোনো বিল পাস হয়নি। এরই মধ্যে আইয়ুবকে পাহাড় কাটার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, কোনো ছড়া বা ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ করতে হলে ফিজিবিলিটি টেস্ট আবশ্যক। গতকাল তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটা অবৈধ। গতকাল বিকালে সরেজমিনে গেলে শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, ৩০ হাজার ঘনফুটের বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে। প্রবহমান ঝিরিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটার দায়ে প্রতি ঘনফুটে ১ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তাকে আজ সব ধরনের নথি নিয়ে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী মামলা হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর শিগগিরই প্রতিবেদন দেয়া হবে।

ওই ঝিরিটা রূপালি ঝরনার একমাত্র পানির উৎস তা জানা ছিল না বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিৎ শীল। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে পাঠিয়ে সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত জানব। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং কোনো পর্যটন স্পটের ক্ষতি হলে তা মেনে নেয়া হবে না।’

ঝিরি বা ছড়া, খালসহ প্রাকৃতিক যেকোনো পানির উৎসই খাস বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি) তাসনীম জাহান। তিনি জানান, পানির উৎসে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরোজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাঁধের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছি এমন কিছু মনে পড়ছে না। পর্যটন ও পরিবেশগত কোনো ক্ষতি হয় এমন কাজ না করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হবে।’




  এ বিভাগের অন্যান্য