দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে আটা-ময়দার দাম আরেক দফা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে গমের সংকট লেগেই আছে। তার ওপর ঊর্ধ্বমুখী ডলারের বিনিময় মূল্য। ফলে আটা-ময়দার দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা গম বেচাকেনা হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ৯৫০ টাকায়। ইউক্রেনের লাল গম বাজারে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ৯০০ টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন শুধু ভারত থেকে আমদানি করা গম দিয়েই চাহিদা মেটাতে হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর বাজারে ঢুকেছে ইউক্রেনের লাল গম। কিন্তু সেটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বাজারে গমের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
এতে গম থেকে উৎপাদিত আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটা আটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকায়। কিছুটা নিম্নমানের আটা বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এসব আটা কেজিপ্রতি বেচাকেনা হচ্ছে ৫৬ টাকায়। ভালো মানের ময়দা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩ হাজার টাকায়। আর প্রতি কেজি বেচাকেনা হচ্ছে ৬০ টাকায়। কিছুটা নিম্নমানের ময়দা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৯০০ টাকায়। আর কেজিপ্রতি ৫৮ টাকায়।
নিতাইগঞ্জের আটা-ময়দা ব্যবসায়ী বেনজীর আহমেদ জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী আসা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গম আমদানিতে পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে ভারত গম রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ৮০০ টাকার গম এক লাফে বেড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়। যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করলে দাম বেড়ে ১ হাজার ৯৫০ টাকা উঠে আসে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত দামে গম বিক্রি করছে।
আটা-ময়দার ব্যবসায়ী সাব্বির আলম জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর গম ব্যবসায়ী বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে ইচ্ছেমতো গমের দাম নির্ধারণ করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আটা-ময়দার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বড় করপোরেট মিলগুলো। তাদের সঙ্গে নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
আট-ময়দা ব্যবসায়ী শুভ্র সাহা জানান, আটা-ময়দার দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বেচাকেনায় চরম মন্দ চলছে। আগে প্রতিদিন দুই-তিন ট্রাক আটা-ময়দা বেচাকেনা হতো। এখন সেখানে দিনে বেচাকেনা হয় ৪০-৫০ বস্তা। মিল চলে এক শিফটে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।